বরিশালের উজিরপুর থানায় হত্যা মামলার নারী আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে রিমান্ড শেষে হাজির হয়ে নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগসহ বর্ণনা তুলে ধরেন মিতু অধিকারী ওরফে মিনতি বিশ্বাস (৩০) নামের ওই নারী। আদালতের বিচারক মাহফুজুর রহমান আসামির অভিযোগ আমলে নিয়ে নির্যাতন এবং হেফজতে মৃত্যুর ধারা অনুযায়ী অনতিবিলম্বে মিতুর দেহ পরীক্ষা করে জখম ও নির্যাতনের চিহ্ন এবং নির্যাতনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেন। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালককে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

গত শুক্রবার রাত ১০টায় শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয় মিতু অধিকারীকে। পরে তাকে হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসি সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়। সেখানে ৫ ঘণ্টার চিকিৎসা শেষে রাত ৩টায় তরিঘরি করে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে বরিশালে।

মিতুর ভাই উত্তম অধিকারী সাংবাদিকদের বলেন, উজিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয় মিতুকে। এরপর গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরপরই এক নারী পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালায় মিতুর ওপর। পরবর্তীতে আশেপাশে উপস্থিত থাকা সার্কেল এসপিও তাকে লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধর করেন। এরপর কারাগারে প্রেরণ করা হয় এবং গত ৩০ জুন দুই দিনের রিমান্ডের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়।

মিতুর ভাই বলেন, থানায় আনার দিন তাকে কোনো মারধর না করা হলেও পরদিন সকালে (১ জুলাই) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার রুমে পাঠানো হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাইনুল মিতুর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এরপর এক নারী পুলিশ সদস্যকে ডাকলে তিনি এসে মিতুকে লাঠি দিয়ে হাতে, পায়ে এবং পিঠে নির্যাতন চালায়। ওই নারী পুলিশ সদস্যের নির্যাতন পছন্দ না হওয়ায় এক পর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই হাতে লাঠি তুলে নেন এবং মিতুকে পেটাতে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, ১৫ থেকে ২০ মিনিট পেটানো হয়। এরপরে অজ্ঞান হয়ে যায় মিতু। যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন নিজেকে হাসপাতালে হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় দেখতে পান। হাসাপাতালে নেয়ার আগে ২ দিন তাকে থানায় আটকে রাখা হয়। পরবর্তীতে মিতু অধিকারীকে ফের থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং ওসির রুমে নিয়ে হাজির করা হয়।

এই হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মাইনুল বলেন, ২৬ জুন উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি গ্রামে একটি ডোবা থেকে বাসুদেব চক্রবর্তী নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বাসুদেবের ভাই পরদিন ওই ডোবা সংলগ্ন বাড়ির এক নারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২৮ জুন ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ জুন তাকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।

দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো নির্যাতন করিনি। এটা একবারেই মিথ্যা অভিযোগ।’

হত্যা মামলার বাদী বরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘আসামি আদালতে নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনছেন এটা শুনেছি।’

বরিশালের পুলিশ সুপার মারুফ হাসান খান বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশনার কথা শুনেছি। এখনও আমরা লিখিত নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’