দীর্ঘ এক যুগ পরে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে মাধাবপাশার ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দীঘিতে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের খাবারের চাহিদা পূরণে ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক। বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে দীঘির জলে ও পাড় ঘেঁষে ৫০ হাজারের অধিক শামুক-ঝিনুক ছাড়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। আর তাকে শামুক সংগ্রহের কাজে সহযোগিতা করেছে উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। এর ফলে শীত মৌসুমে অতিথি পাখি এবং হাঁসেদের খাবারের চাহিদা পূরণ হবে বলে মনে করছেন জেলা এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে দুর্গাসাগর দীঘিতে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের খাদ্যের অভাবে যেন প্রজননে কোনরূপ বাধার সৃষ্টি না হয় এবং খাদ্যের অভাবে তারা যেন চলে না যায় তার জন্যই ব্যতিক্রম এই আয়োজন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।

তিনি জানিয়েছেন, দুর্গাসাগরে ভারসাম্যপূর্ণ ইকোসিস্টেম তৈরি করার জন্য সংযুক্ত করা হয়েছে শামুক এবং ঝিনুক। এছাড়াও দুর্গাসাগরের মধ্যবর্তী দ্বীপকে আরো বেশি দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে সাজানোর জন্য রোপণ করা হয়েছে দেশীয় নানা প্রজাতির বাঁশ এবং ফুলের গাছ। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দ্বীপের চারপাশের জলরাশিতে শাপলা এবং দীপের মাঝে পদ্ম, নানা রঙের গাঁদা, কলাবতী, হাসনা-হেনাসহ নানা ধরনের শীতকালীন ফুল।
জানাগেছে, ‘এস.এম অজিয়র রহমান বরিশাল জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে জেলার জনগণকে সাথে নিয়ে বরিশাল জেলার পাশাপাশি পর্যটন স্পটগুলোর উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারই অংশ হিসেবে জেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পট ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দীঘিকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন।

প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের পরে দুর্গাসাগর দীঘিতে প্রায় এক যুগ পরে পরিযায়ী অতিথি পাখির দেখা মিলেছে। বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিদিন পাখি দেখতে ছুটে যাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সের প্রকৃতি ও পাখি প্রেমী মানুষগুলো। সেখানে গিয়ে তারা অতিথি পাখিদের পাশাপাশি মুগ্ধ হচ্ছেন দীঘির বুক চিড়ে ছুটে চলা বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস, দেশি এবং বিদেশি প্রজাতির পাখি, বানর, কবুতর এবং মায়াবী হরিণ দেখে।

এছাড়াও দীঘির জলে অবমুক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বাতাসের সাথে দীঘির জলে দোল খাচ্ছে পদ্ম ও লাল-সাদা শাপলা। পর্যটকদের বিনোদনে নৌকা, দ্বীপের মাঝে ফুলের বাগান, সদ্য নির্মিত ডিসি মঞ্চ, পিকনিক স্পট ভ্রমণ পিপাসুদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গড়ে উঠেছে।

এছাড়াও বর্তমানে দুর্গাসাগরের অভ্যন্তরে নির্মাণাধীন রয়েছে শিশু পার্ক এবং দক্ষিণ বাংলার কৃষক কুলের নয়ন মনি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এর নামে রেস্টহাউজ। তাছাড়া খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে বলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।