বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নে বর্ষা শেষে বিলের পর বিলজুড়ে ফোটে লাল শাপলা। এ সময় দেশের নানান প্রান্ত থেকে পর্যটক আর প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে যান সেখানে, উপভোগ করেন সবুজের পটভূমিতে লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য। অথচ দশ বছরেও পর্যাটকদের সুবিধার জন্য গড়ে উঠেনি কোন অবোকাঠামো। মেরামত হয়নি কোন রাস্তা ঘাট। উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ আর মধ্য সাতলা গ্রামে প্রতিবছরই ফোটে লাল শাপলা। এর মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিম সাতলার ফুলে ফুলে ভরা বিলগুলো নজর কাড়ে সবচেয়ে বেশি। বরিশাল জেলা শহর থেকে সাতলার এই শাপলা বিলের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। স্থানীয়রা জানান অগাস্ট-অক্টোবর, এই তিন মাস সাতলার বিল শাপলায় ভরপুর থাকে। এটাই সেখানে বেড়াতে যাওয়ার ভালো সময়। লাল শাপলায় ভরপুর সাতলার বিল দেখতে হলে যেতে হবে খুব ভোরে। বিলজুড়ে শাপলারা পাপড়ি মেলে সূর্যোদয়ের আগে সূর্যের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার বন্ধ হতে শুরু করে। সাধারণত সকাল ৯টার পরে গেলে খুব বেশি ফুটন্ত ফুল বিলে দেখা যায় না। শাপলার মৌসুমে প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসেন সাতলার শাপলা বিলে। স্থানীয় পর্যটক গাইডদের মতে, এ সময়ে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক পর্যটক নৌকায় করে বিলে যান বেড়াতে। তবে শুক্র ও শনিবার সেই সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। শাপলার বিল ঘুরে দেখানোর জন্য সাতলার বিভিন্ন স্থানে দশটির বেশি জায়গায় নৌকার ঘাট গড়ে তুলেছেন স্থানীয়রা। এসব ঘাট থেকে ছোট ছোট নৌকায় পর্যটকদের বিল ঘুরিয়ে দেখান স্থানীয় তরুণ-যুবকরা। সাতলার শাপলা বিলে পাঁচ বছর ধরে পর্যটকদের গাইড সেবা দিয়ে আসছেন স্থানীয় তরুণ আলোকচিত্রী শাওন হাওলাদার। পর্যটকদের বিল ঘুরিয়ে দেখানোর পাশাপাশি তিনি তাদের চাহিদা মত সুন্দর মুহূর্তগুলো ক্যমেরাবন্দি করে দেন। লাল শাপলার এই রাজত্বে জাতীয় ফুল ‘সাদা শাপলা’ আর বেগুনি শাপলারও দেখা মেলে। সাতলার শাপলা বিলে বিচরণ করতে দেখা যায় নান রকম জলজ পাখিও। সাতলার বিল থেকে মাছ ধরে আর শাপলা তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেকে। বিল থেকে শাপলা তুলে হারতা ভাসমান হাটসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন তারা। শাপলার ডাটা স্থানীয়দের কাছে সবজি হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। তবে সাতলার শাপলা বিলে বেড়াতে এসে দূষণও ঘটাচ্ছেন পর্যটকরা। বিলের মধ্যে ভ্রমণের সময় তারা ফেলে যাচ্ছেন নানা রকম প্লাস্টিক বর্জ্য। এ বছর আগের তুলোনায় শাপলা ফুল বেশি ফুটে নাই। দশ বছরের বেশি সময় ধরে সাতলার শাপলা বিলকে কেন্দ্র করে পর্যটক সমাগম বাড়তে থাকলেও এ জায়গায় নজর লাগেনি সরকারের। পর্যটকদের সুবিধার জন্য কোনোরকম অবকাঠামোগত সুবিধা গড়ে ওঠেনি এখন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রনতী বিশ^াস জানান, শাপলার বিলকে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যে আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আর পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও আনসার বাহীনি মোতায়ন করা আছে। বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলম তালুকদার জানান, ইতিমধ্যে সাতলার শাপলা বিলকে পর্যাটন হিসাবে ঘোষনা দেয়ার প্রস্তাব মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং এখানে একটি ডাকবাংলো করার জন্য জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সার্বিক সহোযোগিতা করছে। এছাড়া রাস্তা ঘাট মেরামতের জন্য টেন্ডারের আহব্বান করা হয়েছে । আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত রাস্তার সংস্কারের কাজ শুরু হবে।